এক নজরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের গঠনতন্ত্রের সংস্কার প্রস্তাবনা সমূহ
  • ‘ভোটার ও প্রার্থী’ হওয়ার ক্ষেত্রে সংশোধন প্রস্তাবনা:

    ডাকসু’র গঠনতন্ত্রে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ নির্বাচনে ‘ভোটার ও প্রার্থী’ হওয়ার ক্ষেত্রে বয়সীমা সুনির্দিষ্টভাবে ৩০ বছর না করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ‘ভোটার ও প্রার্থী’ হওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।

    আমাদের মতে নিয়মিত ছাত্রত্বের বিস্তারিত সংজ্ঞায়ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের, বিশেষ করে একাডেমিক বডির সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এক্ষেত্রে ডাকসু'র গঠনতন্ত্রে নির্দিষ্ট বয়সসীমা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক স্বাধীনতায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে চায় না বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

    ২০১৯ সালের সংশোধনীতে শুধুমাত্র ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে সুবিধা করে দেয়ার স্বার্থে ‘ভোটার ও প্রার্থী’ হওয়ার ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩০ বছর বেঁধে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছিলো। তাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চায়, ছাত্র সংসদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক স্বাধীনতার মধ্যে ভারসাম্যটি ফিরিয়ে আনতে শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যৌক্তিকভাবে নিয়মিত ছাত্রত্বের বিস্তারিত সংজ্ঞা নির্ধারণ করবে।

  • লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিমার্জন সংক্রান্ত প্রস্তাবনা:

    ডাকসু’র গঠনতন্ত্রে বিদ্যমান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক, আধুনিক ও সমসাময়িক প্রয়োজনীয়তা ও আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ। এসকল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছাত্র সংসদের সংবিধানের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ডাকসু’র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে গণতান্ত্রিক, আধুনিক ও সমসাময়িক করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ৪ (চার)টি নতুন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রস্তাব করেছে।
    (ক) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের সক্রিয় ও কার্যকরী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা;

    (খ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখা এবং লালন করা;

    (গ) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি সৃষ্টি করা; এবং

    (ঘ) এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, এর সাথে সংযুক্ত ও অধিভুক্ত কলেজ/ইনস্টিটিউট সমূহের শিক্ষার্থী এবং দেশ ও দেশের বাহিরে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রাতৃপ্রতিম অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতাসহ শিক্ষাক্রমিক এবং সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা।

  • ডাকসু’র কার্যাবলি পরিমার্জন সংক্রান্ত প্রস্তাবনা:

    বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব, তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষ সাধন, বিভিন্ন কার্যক্রমে তাদের সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ, কিংবা তাদের মানবাধিকার সুরক্ষা বিবেচনায় ডাকসু’র বর্তিমান গঠনতন্ত্রে উল্লেখিত কার্যাবলিগুলো খুবই হতাশাব্যঞ্জক। ডাকসু'র কার্যাবলিসমূহকে আরও শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল বর্তমান সংবিধানের মূল কাঠামো এবং শিক্ষার্থীদের আধুনিক গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে মাথায় রেখে ১০টি (দশটি) কার্যাবলি প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ১০টি কার্যাবলির মধ্যে মূলত ১টি নতুন কার্যাবলি সংযুক্ত করা, ৩টি কার্যাবলিতে বিশদ পরিমার্জন এবং বাকি কার্যাবলিসমূহে প্রয়োজন অনুসারে সামান্য পরিবর্তন ও গ্রহণযোগ্য কার্যাবলিসমূহকে অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল কর্তৃক প্রস্তাবিত নতুন কার্যাবলিটি হচ্ছে:
     ছাত্র সংসদ সর্বদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার সংরক্ষণ ও সুরক্ষার জন্য সর্বদা সচেষ্ট ভূমিকা পালন করবে।

    এছাড়াও যেসকল নতুন বিষয় কার্যাবলিতে যে সকল বিষয় সংযুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে:
     শিক্ষার্থীদের মধ্যে নাগরিক অধিকার, আইনি সুরক্ষা, ডিজিটাল নিরাপত্তা এবং গণমাধ্যম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি ও সংশ্লিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করা, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার যথাযথভাবে চর্চা করতে পারে এবং ভুয়া খবর ও গুজব প্রতিরোধে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারে।

     নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশ, দক্ষতা বৃদ্ধি, আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি এবং শৃঙ্খলা, নৈতিক মূল্যবোধ ও দায়িত্বশীল মূল্যবোধ গঠনে প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, সেমিনার, কাউন্সিলিং এবং অন্যান্য সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা।

    ছাত্রদল মনে করে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে এবং কার্যনির্বাহী কমিটির নিয়মিত নির্বাচন নিশ্চিত করতে ডাকসু'র কার্যাবলিসমূহতে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৭৩-এ যথাযথ সংশোধন আনা একান্ত জরুরী।

  • উপদেষ্টা পরিষদ গঠন

    ডাকসু ও হল সংসদসমূহের নির্বাহী কমিটির সভাপতির পদকে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তাবনা দেয়ার পাশাপাশি সভাপতি পদের ক্ষমতার ভারসাম্য আনার জন্য শিক্ষক, প্রশাসক, এলামনাই ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে "উপদেষ্টা পরিষদ" গঠনের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বাজেট অনুমোদন সহ সভাপতি পদের কিছু দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে নির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে উপদেষ্টা পরিষদ নির্বাহী কমিটির দায়িত্ব পালন করে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবে। প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদের আকার হবে নিম্নরূপঃ

    i. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (আহ্বায়কের দায়িত্বে)
    ii. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন);
    iii. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ;
    iv. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি;
    v. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট-এর একজন নির্বাচিত সদস্য (প্রফেসর ক্যাটাগরি);
    vi. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন (DUAA)-এর সভাপতি;
    vii. ডাকসু’র নির্বাহী কমিটির নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত সহ-সভাপতি (সদস্য সচিবের দায়িত্বে)

ডাকসু’র নির্বাহী পরিষদ সংস্কার প্রস্তাবনা

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-এর সভাপতির পদটি শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য যে, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, ক্যামব্রিজ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, এমআইটি গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, হার্ভার্ড গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন সহ সকল আন্তর্জাতিক ও আধুনিক ছাত্র সংসদসমূহতে সভাপতির পদটি শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হয়ে থাকে।

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে নারী শিক্ষার্থীদের কার্যকরী অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের স্বার্থে নির্বাহী কমিটিতে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি করে মোট দুইটি সহ-সভাপতি এবং অনুরূপভাবে দুইটি সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে আলাদাভাবে নির্বাচনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

  • ডাকসু'র নির্বাহী কমিটিতে নিম্নরূপ ৫ টি নতুন সম্পাদক পদের প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে :
    i. মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক (Secretary, Human Rights and Legal Affairs),
    ii. স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক (Secretary, Health and Environment),
    iii. জেন্ডার সমতা ও অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক সম্পাদক (Secretary, Gender Equality and Inclusion),
    iv. গবেষণা ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (Secretary, Research and Development), এবং
    v. কর্মসংস্থান ও সক্ষমতা বৃদ্ধি বিষয়ক সম্পাদক (Secretary, Employability and Capacity Building)

  • বর্তমান গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ নং 5(e) এবং 6(a) অনুযায়ী কোষাধ্যক্ষ পদটিতে পদাধিকারবলে উপাচার্য কর্তৃক একজন শিক্ষককে মনোনয়ন দেয়ার নিয়মকে পরিবর্তন করে অর্থ সম্পাদক পদে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত শিক্ষার্থীর উপর ডাকসু'র আর্থিক দায়দায়িত্ব অর্পন করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ নির্বাহী কমিটির অর্থ সম্পাদকের সকল কার্যক্রমে সহায়তা ও সার্বিক উপদেশ প্রদান করবেন।

  • বর্তমান গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ নং 5(e) তে বর্ণিত স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক (Secretary, Struggle for Independence and Liberation War Affairs) পদটির নাম "মুক্তিযুদ্ধ, গনতন্ত্র ও '২৪ এর গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক সম্পাদক" (Secretary, Liberation War, Democracy and Mass Uprising 2024 Affairs)-এ রূপান্তর করে এ পদের কার্যাবলী নাম অনুযায়ী পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালের সিপাহী-জনতার বিপ্লব, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ২০০৭ সালের গনতান্ত্রিক আন্দোলন ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সমুন্নত রাখার পাশাপাশি গণতন্ত্র, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, সাম্য ও সবার জন্য সমান সুযোগের মত আদর্শসমূহের প্রসার হবে এই পদের কার্যক্রম।

  • বর্তমান গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ নং 5(i) ও (j) তে বর্ণিত ডাকসু'র নির্বাহী কমিটির সাহিত্য সম্পাদক ও সংস্কৃতি সম্পাদক- এই দুইটি পদকে একীভূত করে "সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক" নামক অধিক কার্যকর পদ তৈরীর প্রস্তাব করা হয়েছে

  • ডাকসু'র নির্বাহী কমিটির নির্বাচিত সদস্য পদ ১৩টি থেকে বৃদ্ধি করে অনুচ্ছেদ নং 5 এর শেষ অংশ অনুসারে প্রত্যেক সম্পাদকের সাথে নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে থেকে একজন করে ডেপুটি সম্পাদক নিয়োগের সুবিধার জন্য এবং কমিটির গণতান্ত্রিকতা রক্ষার স্বার্থে ১৫টিতে উন্নিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

    এর ফলে ডাকসু নির্বাহী কমিটিতে মোট ৩৩ (তেত্রিশ) টি পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

  • উপকমিটির বিধান সংস্কার প্রস্তাব: বর্তমান গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ নং 7(k) সংশোধন করে উপকমিটির প্রধান হিসেবে একজন সম্পাদক এবং সদস্য হিসেবে নির্বাচিত সদস্যদের রাখার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে- যাতে করে নির্বাহী কমিটির সম্পাদক ও নির্বাচিত সদস্যগণ আরো স্বাধীন ও কার্যকরীভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন।

  • নির্বাহী পরিষদের সভা সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাব : "নির্বাহী পরিষদের সভা" নামক একটি আলাদা শিরোনামে নির্বাহী কমিটির সভা সংক্রান্ত নিয়মাবলী বর্ণনা করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। নির্বাহী কমিটির সভার নোটিশ জারি করার জন্য অনুরোধপত্র পাসের পূর্বশর্ত ৮ জন [বর্তমান গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ নং 7(i)] থেকে এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের স্বাক্ষরে পরিবর্তন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্বাহী কমিটির সভার কার্যাবলী এবং এর ক্ষমতা আরও নির্দিষ্টভাবে নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন ধরণের রেজুল্যুশন [অর্ডিনারি এবং এক্সট্রা-অর্ডিনারি] সংজ্ঞায়িত করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। ডাকসু'র কর্মচারিদের নিয়োগ, বরখাস্ত, অনাস্থা প্রস্তাব ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে এক্সট্রা-অর্ডিনারি রেজ্যুলুশন করার পূর্বশর্ত প্রস্তাব করা হয়েছে।

নির্বাচন ব্যবস্থায় সংস্কার প্রস্তাবনা:

  • বর্তমান গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ নং 6(c) কে সংশোধন করে নিয়মিত নির্বাচনের বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাহী কমিটির ৩৬৫ দিনের মেয়াদ শেষ হবার আগে অথবা মেয়াদ শেষ হবার পর অতিরিক্ত ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে নির্বাহী কমিটি তৎক্ষণাত বিলুপ্ত হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানকে প্রাধান্য দিয়ে নির্বাহী কমিটির সার্বিক দায়িত্ব প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদ পালন করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।

  • ২০১৯ সালের নিয়ন্ত্রিত কারচুপির ডাকসু নির্বাচনের অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না হয়, এবং সকল শিক্ষার্থী যেন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বিঘ্নে ভোটদান করতে পারে সে লক্ষ্যে নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রসমূহকে হল থেকে একাডেমিক ভবনে স্থানান্তরিত করার জন্য বর্তমান গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ নং 8(h) ও (j) সংশোধন করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছেন।

  • এছাড়াও "নির্বাচন কমিশন" এর সুস্পষ্ট সংজ্ঞায়ন সহ সকল হলের রিটার্নিং অফিসারদের তত্ত্বাবধান করতে চিফ রিটার্নিং অফিসারকে সহায়তার জন্য ৫ জন সহকারি চিফ রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করার গুরুদায়িত্ব উপাচার্য মহোদয়ের হাত ন্যস্ত রাখার জন্য বর্তমান গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ নং 8(o) এর President শব্দটি সংশোধন করে Convenor of the Advisory Body করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

গঠনতন্ত্র সংস্কারে সিন্ডিকেটের একক ক্ষমতা কমিয়ে আনার প্রস্তাব :

  • গঠনতন্ত্র সংস্কারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সরাসরি ও একক ক্ষমতার বিষয়টিকে সংশোধন করে গঠনতন্ত্র সংস্কার প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদের সুপারিশ অনুসারে করার জন্য বর্তমান গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ নং 16 সংশোধন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

  • এছাড়াও গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে সভাপতির একক ক্ষমতাবলীকে বিকেন্দ্রীকরণ করে তা নির্বাহী কমিটি এবং প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদের হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

  • সভাপতি পদে নির্বাচিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রাখার প্রস্তাব :

    হল সংসদের সভাপতি পদে হল প্রাধ্যক্ষের পদাধিকারবলে দায়িত্ব পালনের বিধান পরিবর্তন করে সভাপতি পদে নির্বাচিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

  • কোষাধ্যক্ষ পদের পরিবর্তে নির্বাচিত অর্থ সম্পাদক পদ প্রণয়নের প্রস্তাব :

    বর্তমান গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ নং ১২ অনুযায়ী হল সংসদের কোষাধ্যক্ষ পদে শিক্ষককে মনোনয়ন দেয়ার বিধান পরিবর্তন করে অর্থ সম্পাদক পদে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত শিক্ষার্থীর উপর হল সংসদের আর্থিক দায়দায়িত্ব অর্পন করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে হল প্রাধ্যক্ষ একজন হাউজ টিউটরকে অর্থ সম্পাদকের সকল কার্যক্রমে সহায়তা ও সার্বিক উপদেশ প্রদান করার জন্য মনোনয়ন দেয়ার প্রস্তাবনাও দেয়া হয়েছে।

  • হল সংসদসমূহের লক্ষ্য ও কার্যাবলী সংস্কারের প্রস্তাব :

    i. হল প্রাঙ্গনে আবাসিক শিক্ষার্থীদের যেকোন প্রকার অন্যায্য আচরণ হতে সুরক্ষা প্রদান করা; ii. হলে সংযুক্ত শিক্ষার্থীদের যথোপযুক্ত আবাসিক সুবিধা ও শিক্ষার যথার্থ পরিবেশ নিশ্চিতকরণ; iii. হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ; iv. হল সংসদের সদস্যদের মধ্যে শিক্ষাক্রমিক, সহ-শিক্ষাক্রমিক, সাংস্কৃতিক এবং ক্রীড়া কার্যক্রম এবং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা; v. হল প্রভোস্ট কর্তৃক নির্ধারিত বা অনুমোদিত অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করা।

  • হল সংসদের উপদেষ্টা পরিষদ পরিষদ :

    হল সংসদসমূহের নির্বাহী কমিটির সভাপতির পদকে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তাবনা দেয়ার পাশাপাশি সভাপতি পদের ক্ষমতার ভারসাম্য আনার জন্য শিক্ষক, প্রশাসক, এলামনাই ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে "উপদেষ্টা পরিষদ" গঠনের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সভাপতি পদের কিছু দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি হল সংসদ স্থগিত থাকাকালে নির্বাহী কমিটির দায়িত্ব পালন করা এবং নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে নির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে উপদেষ্টা পরিষদ নির্বাহী কমিটির দায়িত্ব পালন করে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবে। প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদের আকার হবে নিম্নরূপ : i. সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষ (আহ্বায়কের দায়িত্বে) ii. জ্যেষ্ঠতা অনুসারে দুইজন হাউজ টিউটর; iii. সংশ্লিষ্ট হল এলামনাই সোসাইটির সভাপতি; iv. হল সংসদের নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি (সদস্য সচিবের দায়িত্বে)

  • উপাচার্য ও প্রাধ্যক্ষ কর্তৃক হল সংসদ স্থগিতকরণের বিধান সংস্কার:

    বর্তমান গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ নং ৯ সংস্কার করে উপাচার্য ও প্রাধ্যক্ষ কর্তৃক হল সংসদ স্থগিতকরণের অগণতান্ত্রিক বিধানটি পরিবর্তন করে উক্ত ক্ষমতা প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদের হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

  • বর্তমান গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ নং ৬, ৭ ও ৮ বাতিল ঘোষণা করার প্রস্তাবনা

    হল সংসদসমূহের বর্তমান গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ নং ৬, ৭ ও ৮ বাতিল ঘোষণা করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। এসব অনুচ্ছেদ বৈশিষ্ট্যগতভাবে ঔপনিবেশিক, স্বৈরতান্ত্রিক ও নিপীড়নমূলক বিধায় একটি আধুনিক ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্রে থাকতে পারে না।

  • নির্বাহী কমিটির গাঠনিক সংস্কার প্রস্তাবনা :

    হল সংসদের গাঠনিক বৈশিষ্ট্য জারি রেখে বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে নির্বাচিত নির্বাহী পরিষদের আকার নিম্নরূপ করার প্রস্তাবনা করা হয়েছে : i. সভাপতি; ii. সহ-সভাপতি; iii. সাধারণ সম্পাদক; iv. সহ-সাধারণ সম্পাদক; v. অর্থ সম্পাদক; vi. মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক; vii. ক্রীড়া সম্পাদক; viii. সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক; ix. খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক; x. সমাজসেবা সম্পাদক; এবং xi. ৫ (পাঁচ) জন নির্বাচিত সদস্য এর ফলে হল সংসদের নির্বাহী কমিটিতে মোট ১৫ (পনেরো)টি পদে নির্বাচনের প্রয়োজন হবে।

  • হল সংসদের নির্বাচন বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব :

    বর্তমান গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ নং 62, 63, 66, এবং 69 সংস্কার করে নির্বাচনের সময় ঘোষনা, মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও মনোনয়ন সংক্রান্ত আপিল শুনানির ক্ষমতা প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেবেন। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনার গুরুদায়িত্ব সংশ্লিষ্ট হল প্রাধ্যক্ষের উপর ন্যস্ত রাখার নিমিত্তে অনুচ্ছেদ নং 68 সংস্কার করে দায়িত্বটি প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ককে দেয়ার প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে।

  • বর্তমান গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ নং 75 সংস্কার :

    বর্তমান গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ নং 75 সংস্কার করে অডিট কমিটির দুইজন শিক্ষক সদস্য মনোনয়নের ক্ষমতা সরাসরি হল প্রাধ্যক্ষের হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

উপরোক্ত বিষয়াবলী সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক প্রদত্ত ছক আকারে মোটাদাগে মোট ৪০টি পরিবর্তন (কেন্দ্রীয় সংসদে ১৮টি এবং হল সংসদে ২২টি) সম্বলিত প্রস্তাবনা এবং ড্রাফটিং ও ফরম্যাটিং-এ প্রয়োজনীয় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরিবর্তন-পরিবর্ধন সহকারে মোট ৩৭৭ টি সংস্কার সম্বলিত একটি সংশোধিত গঠনতন্ত্র  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মহোদয় বরাবর পেশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। 

বিস্তারিত  নিচের বাটনে ক্লিক করে পিডিএফে সংস্কার প্রস্তাবগুলো পড়া যাবে।

Scroll to Top