নাহিদুজ্জামান শিপন

সাধারণ সম্পাদক

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

নাহিদুজ্জামান শিপন বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একজন চিন্তাশীল, সাহসী দায়িত্বশীল ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি সংগঠনের প্রান্তিক স্তর থেকে উঠে এসে নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে জায়গা করে নিয়েছেন। তার এই পথচলা শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত রাজনৈতিক জীবনের বিবরণ নয়; বরং এটি এক প্রজন্মের আত্মপ্রত্যয়ের প্রতিচ্ছবি—যারা স্বপ্ন দেখে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার।

শিপনের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নতুন গতি, নতুন ভাষা নতুন কৌশলের সন্ধান পেয়েছে। তিনি সংগঠনকে কেবলমাত্র রাজনৈতিক পরিসরে সীমাবদ্ধ রাখেননি; বরং সেটিকে শিক্ষার্থীস্বার্থ, নৈতিক দায়িত্ব মানবিক মূল্যবোধের একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরিত করেছেন। সুসংগঠিত চিন্তাভাবনা, সময়োপযোগী কৌশল এবং ছাত্রবান্ধব রাজনৈতিক নৈতিকতা তার নেতৃত্বকে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ গুরুত্ববহ করে তুলেছে।

শিপন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেম এবং গণতান্ত্রিক চেতনায় গভীরভাবে অনুপ্রাণিত। একইসঙ্গে তিনি জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে বেগম খালেদা জিয়া তারেক রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত রাজনৈতিক দর্শন অনুসরণ করেন। গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গন, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি নিজেকে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রেখেছেন।

২০২৪ সালের পহেলা মার্চ ঢাবি ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরপরই শিপন সংগঠনকে পুনর্গঠন পুনঃসক্রিয় করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন এবং নতুন কর্মীদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তিনি একটি সুশৃঙ্খল, সচেতন এবং কার্যকর সংগঠন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরেই একচেটিয়া রাজনৈতিক আধিপত্যের যে বাস্তবতা বিরাজ করছে, তার বিপরীতে শিপন ছাত্রসংগঠনের পারস্পরিক সহাবস্থানের দাবি তোলেন। তার ভাষায়, “ছাত্ররাজনীতির বর্তমান করুণ অবস্থার উত্তরণে ক্যাম্পাসে সকল সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।” এই অবস্থান থেকে তিনি ঢাবি ছাত্রদলের ব্যানারে ‘শিক্ষার্থী নির্যাতনবিষয়ক তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ সেল’ এবং ‘আইনি সহায়তা সেল’ গঠন করেন, যা নিপীড়নের শিকার শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়তার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে শিক্ষাঙ্গনে সহিংসতা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তিনি সোচ্চার ভূমিকা পালন করছেন। তার মতে, “শুধু শাস্তি নয়, অপরাধে জড়িত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সনদও বাতিল করা উচিত।” একইসাথে, প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবিও তিনি বারবার তুলে ধরেছেন।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র অভ্যুত্থানে শিপনের নেতৃত্ব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবশালী। তিনি ঢাবির ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হন, যা আন্দোলনের ইতিহাসে তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

জুলাই পরবর্তী সময়ে তিনি গঠনমূলক পরিবর্তনের লক্ষ্যে এগিয়ে আসেন। শিপন ডাকসু হল সংসদের জন্য যুগোপযোগী গঠনতন্ত্র প্রণয়নের একটি প্রস্তাবনা প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করেন, যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সরাসরি অংশগ্রহণ এবং কার্যকর জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।

নারী শিশুদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে তিনি দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন এবং ধর্ষণ নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এর মাধ্যমে তিনি শুধু ক্যাম্পাসে নয়, সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রতিবাদের সংস্কৃতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

শিপন নিয়মিতভাবে কর্মশালা, মতবিনিময় সভা এবং সাংগঠনিক প্রশিক্ষণের আয়োজন করে সংগঠনের ভিতকে শক্তিশালী করছেন এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে আদর্শিক রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে ঢাবি ছাত্রদল একটি সচেতন, সুসংগঠিত দায়িত্বশীল ছাত্রসংগঠনে রূপান্তর লাভ করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তিনি ডাকসু নির্বাচন বাস্তবায়নের দাবি জানান এবং শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশ সংগঠনের অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে নিরবিচারে কাজ করে যাচ্ছেন।

শিপনের নেতৃত্ব শুধু ক্যাম্পাসজুড়ে সীমাবদ্ধ নয়। দেশের বন্যাকবলিত অঞ্চলে গিয়ে তিনি নিজে খাদ্য, ওষুধ চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ করেন—যা ছাত্রনেতা হিসেবে তার মানবিক দায়িত্ববোধের পরিচায়ক। এছাড়া সহযোদ্ধা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে তার নেতৃত্বে সংগঠিত আন্দোলন দেশের ছাত্রসমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

নাহিদুজ্জামান শিপন শুধুমাত্র একজন সংগঠনের নেতা নন; তিনি সময়ের প্রেক্ষাপটে এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, যিনি নেতৃত্বের সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণ করছেন। ছাত্রদলের নেতৃত্বে তার পদচারণা প্রমাণ করে, ছাত্ররাজনীতি এখন আর কেবল রাজনীতির অনুশীলন নয়—এটি একটি বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলন, যেখানে শিক্ষার্থী অধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মানবিকতা পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

নিউজ / ডিজিটাল মিডিয়া

কভারেজ

Scroll to Top